শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৫ পূর্বাহ্ন
কাজী মাহমুদুল হক সুজন : বাহুবলের ফয়জাবাদ বধ্যভূমি আজও অযতœ আর অবহেলায়। মহান মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী বাহুবলের ফয়জাবাদ বধ্যভূমি বর্তমানে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। পাহাড় ঘেঁষা এ বধ্যভূমিতে প্রতিনিয়ত নানা অনৈতিক কর্মকান্ড ঘটলেও তা যেন দেখার কেউ নেই। বধ্যভূমির বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে গেলেও তা সংস্কারের নেই কোনো উদ্যোগ। মাঝেমাঝে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ এখানে ঝোপঝাঁড় পরিষ্কার করলেও রক্ষণাবেক্ষণ করে না কেউ। উপরে উঠার সিড়িতে রেলিং না থাকায় বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধা তো দূরের কথা অনেক পর্যটকরাও উপরে উঠতে ভয় পান। একমাত্র শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ছাড়া আর কোন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানও হয় না এখানে। সরকারিভাবে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিলে পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় স্থান হিসেবে গড়ে ওঠতো এই বধ্যভূমি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাহুবল উপজেলার শেষ প্রান্তে ঢাকা-সিলেট ভায়া মৌলভীবাজার সড়কে আমতলী চা-বাগানে ঐতিহাসিক এ বধ্যভূমির অবস্থান। সড়কে মিরপুর বাজার থেকে কিছু দূর এগুলেই জ্বালানিতেল শোধনাগার। এর প্রধান ফটকের ঠিক উল্টো পাশেই এ বধ্যভূমি। আমতলী চা বাগানের ৪নং সেকশনের একটি টিলার ওপর এটি অবস্থিত। এর চারপাশেই টিলায় ঘেরা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাহুবল উপজেলা ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য বাঙালি নারী-পুরুষকে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পাক হায়েনারা। মুক্তিকামী অসংখ্য বীর যোদ্ধাকেও এখানে এনে হত্যার পর মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিন এ স্থানটি চরম অবহেলায় পড়ে ছিল। ২০০৬ সালে সরকার এটি রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়। গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে টিলায় ওঠার জন্য নির্মাণ করা হয় একটি সিঁড়ি। উপরে হত্যাকান্ডের স্থানটিতে ভাবগাম্ভীর্যময় পরিবেশে একটি বধ্যভূমি নির্মাণ করা হয়। শুধু ঐতিহাসিক নয়, সৌন্দর্যময় এ স্থানটিতে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন বনভোজনেও যায়। এখানে দেখা মেলে বানরসহ অসংখ্য জাতের পাখির। কিন্তু নির্মাণের পর থেকে এটি রক্ষণাবেক্ষণে কারও কোনো উদ্যোগ নেই। মাঝে মাঝে বাগান কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে এখানে দায়িত্বরত শ্রমিকরা তা পরিষ্কার করেন।
নির্জন এ বধ্যভূমিতে প্রতিনিয়তই ঘটে নানা অনৈতিক কাজকর্ম। সেখানে গিয়ে এর অসংখ্য প্রমাণও মিলেছে। বনভোজনে আসা মানুষজনের খাবারের প্যাকেট যেমন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, তেমনি চলে অসামাজিক কাজের অনেক কর্মকান্ডও। নাম প্রকাশ না করা শর্তে পার্শ্ববর্তী লেবু বাগানের এক শ্রমিক জানান, প্রতিনিয়তই এখানে নানা অসামাজিক কর্মকান্ড ঘটে। প্রায়ই বিকালে বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ি, মোটরসাইকেলযোগে যুবক-যুবতী এখানে আসে। নির্জন হওয়ায় নিরাপদ জায়গা হিসেবে তারা এখানে উঠে আমোদ ফুর্তি করে। অথচ এটি শুধু ঐতিহাসিক স্থান নয়, একটি পবিত্র কবরস্থানও বটে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা হক বলেন, বধ্যভূমির উপরে উঠার সিড়িতে রেলিং লাগানো, বিদ্যুত সংযোগসহ বিভিন্ন সংস্কার কাজ অচীরেই করা হবে। তিনি আরও বলেন, বধ্যভূমিটিকে আকর্ষনীয় ও পর্যটকমূখর করতে উদ্যোগ গ্রহন করে আলাদা বাজেটও রাখা হবে।